সেমিনারে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের শুরুতে সেমিনার প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
জাতীয় সেমিনারে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতি আজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আসুন আমরা সংলাপে বসি। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকেও সব দলকে নিয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না, তারাই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। তারা যেনতেন একটি নির্বাচন দিয়ে পুরানো ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনতে চায়। অনেকে ভাবছেন আমরা বিভক্ত হয়ে গেছি। আমাদের মাঝে জুলাইয়ের চেতনা এখনো আছে। আমরা বিভক্ত হইনি। যারা পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না, তারা জানে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের পরে যারা ক্ষমতায় যাবেন, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও এর আইনি ভিত্তি দেবেন। তারা যে এটা করবেন সে গ্যারান্টি কোথায় পেলেন? নির্বাচনে জেতার ও ক্ষমতা যাওয়ার গ্যারান্টি তো ফ্যাসিস্ট হাসিনা দিত। তাদের কথার মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়।
ডা. তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনে আমরা চড়ুইভাতি খেলতে যাইনি। সেখানে আমরা অনেক কিছু ছাড় দিয়েছি। ঐকমত্য কমিশনে যেসব প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্ত রাখা হয়েছে, নির্বাচনের আগেই সে সবের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। তার পর হবে জাতীয় নির্বাচন। নয়তো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়। নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি চায়।
প্রধান উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, পিআর, সংস্কার এবং জুলাই সনদের আইনগত বিষয়ে গণভোট দিন। জনগণই এসবের সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শান্তি চাই কিন্তু জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের আগে এবং পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলে, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে দাবি পূরণে বাধ্য করা হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই ঘোষণা অসম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দাবি অনুযায়ী জুলাই ঘোষণাকে পূর্ণাঙ্গতা দান করতে হবে এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জুলাই ঘোষণা ও সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তারা তা মানবে না। ইতোমধ্যেই একটি দলের নেতা বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে সবকিছু মুছে ফেলবেন। দেশের অধিকাংশ দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এই পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। যারা বলেন জনগণ পিআর বোঝে না তারা সঠিক কথা বলছেন না। আমরা আইন সভার দুকক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। আমরা সকল ইসলামী ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নিয়েই একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে মাঠ সমতল করতে হবে। তারপর নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি ৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি। ৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তা আশাব্যঞ্জক নয়। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পুরনো সংবিধান রেখে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যাবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডক্টর এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল মহান প্রত্যাশাকে সামনে রেখে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূর্ণতা লাভ করেনি। আমাদের শহীদগণ জীবন দিয়েছেন। আহতরা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে। জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে এমন কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে যেগুলো ইতিহাস বিকৃতির পর্যায়ে পড়ে। এই সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত তথ্য দিয়েছে। যেখানে জাতিসংঘ বলছে ১৪০০ বেশি। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার বলছে এক হাজারের বেশি। জুলাই সনদ ঘোষণা শুধু যথেষ্ট নয়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং কাঠামোর ওপর দাঁড় করাতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র যদি আইনি ভিত্তি না পায় তাহলে উপদেষ্টা আপনার এবং আপনার সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জুলাই ঘোষণাপত্র যদি আইনি ভিত্তি না পায় বাংলাদেশে আবারও ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনরায় ফিরে আসবে। অভিলম্বে সরকারের করণীয় ঠিক করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধন করতে হবে। জুলাই সনদকে আইনিরূপ দিতে হবে। প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামব আবারও রক্ত দিব। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির¦াচন হবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে। এই জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে দেওয়া হয়নি। এই সরকারের একটি দলের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। চেতনাবাজি বন্ধ করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে পিআর পদ্ধতিতে। প্রয়োজনে গণভোট দিন। গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, একটি দলের পরামর্শে চলছে বর্তমান সরকার। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া না হলে বিপ্লব ছিনতাই হয়ে যাবে। ’৭১ সালের বিজয় একটি দেশ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এই জুলাই বিপ্লব যদি ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে জনগণ ক্ষমা করবে না।
সেমিনারে যোগ দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে আবারও ফ্যাসিবাদেরপদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমরা এই মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দিতে পারি না। যে ফ্যাসিবাদ একটি দলকে গত ১৬ বছরে নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আজকে এখানে যারা উপস্থিত দ্বিতীয়- তৃতীয় শ্রেণির নেতারা রয়েছে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, আমরা আজ আর পেছনে যাব না, হয় শহীদ না হয় বিজয় অর্জন। জামায়াতকে আজকে সবাই চায় বি টিম থাকুক। জামায়াত ক্ষমতায় না গেলে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। এ দেশের তৌহিদী জনতা অর্ধশত বছর যাবত লড়াই করে আসছে যে কারণে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। মুসিলম সেনাপতি স্পেন বিজয়ের পর যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, আজকে যদি কুরআনের আইনকে স্টাবলিস্টমেন্ট করতে চান এই মাটিতে তাহলে আজকে আপনাকে সেই শপথ নিতে হবে। সেই শপথে বলীয়ান হয়ে মাঠে এখন থেকে প্রস্তুতি নিন। কোনো শক্তির কাছে মাতা নত করা যাবে না। একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি দিনদিন জুলাইকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র চলছে। শহীদ আবু সাঈদকে বিক্রি করা শেষ। জনগণের সিদ্ধান্তে, জনগণের বিপ্লবে যে হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গিয়েছিল; যে জনগণের সিদ্ধান্তে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। সেই অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পরিচালনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দলের মতামত মেনে নেওয়ার জন্য জনগণ মেনে নিবে না। যে জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসিনাকে বিতাড়িত করেছিল সেই জনগণের সিদ্ধান্তেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে গণভোট দিতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ও গণভোট হয়েছিল। গণভোটের সিদ্ধান্ত হোক তার পর জাতীয় নির্বাচন হলে কারও আপত্তি হওয়ার কথা নয়।
এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামুল বসির বলেন, জুলাইয়ের যে অভ্যুত্থান এটি যেন ব্যর্থ হয়ে না যায়। আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে যাই তাহলে আগামী দিনে আর কোনো তরুণরা, জনতা শ্রমিক তার বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার তাড়াতে আসবে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হতবে। বঙ্গভবনে যে চুপ্পু বসে আছে তাকে সরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার ছায়া যেখানে পাব সেখানে শেষ করে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে একটি নির্বাচন দিতে হবে।
জাতীয় সংস্কার জোটের আহ্বায়ক মেজর অব. আমিন আহমেদ আফসারী বলেন, ৫৪ বছর পর এসে আমি উপলব্ধি করছি; ৫৪ বছর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান আমলে যে ঘোষণা ছিল ‘এ দেশ স্বাধীন হলে আরেকটি দেশের অধীনে চলে যাবে’ সেই অনুভূতিটা এখন আমরা হারে হারে টের পাচ্ছি। এই কারণে জামায়াতে ইসলামকে আমি আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের প্রজন্ম আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে; আমাদের চারপাশে যে শত্রু আছে তাদের যে দালাল এই দেশে আছে সবচেয়ে সস্তায় পাওয়া যায় এই দালাল। আর কোনো দেশে এই দালাল পাওয়া যায় না। এই দালাল ও চাঁদামুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আর যদি হয় সেটা হবে অপনির্বাচন। সংস্কারবিহীন নির্বাচন স্বৈরাচারের পুনর্বাসন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অংশ এই সংস্কার মেনে নিতে পাড়ছে না। সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যদি কোনো রাজনৈতিক দল এই সংস্কার এবং জুলাই সনদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। কারণ মেন্ডেট তাদের দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে জনগণ। এই সরকারের জবাবদিহি আছে ২০ কোটি মানুষের নিকট। কে মানছে কে মানছে না সে দিক না দেখে সরকারকে জনগণের দিকে দেখতে হবে জনগণ কী চায়।
জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়- শীর্ষক জাতীয় সেমিনার প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন আইনজীবী শিশির মনির।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। ১৬ বছরের শাসনামলে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে তোলে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে এবং নির্বাচন কমিশনকে একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। একইসাথে ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এভাবেই বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশেকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে। ফ্যাসিবাদী ও বৈষম্যমূলক শাসনের প্রতিবাদে দেশের ছাত্র-জনতা সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই সার্বজনীন আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সফল গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। সহস্রাধিক মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হন। ২০ হাজারের অধিক মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন। আন্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী পরিষদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ আপীল বিভাগের বিচারপতিগণও পদত্যাগে বাধ্য হন। দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে (৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত) দেশে কোন সরকার বিদ্যমান না থাকায় সাংবিধানিক শূন্যতার (Constitutional Vacuum) সৃষ্টি হয়। অকার্যকর হয়ে পড়ে সংবিধানের অনেক বিধানাবলি যেমন: প্রথম ভাগের অনুচ্ছেদ- ৭ক, ৭খ, চতুর্থ ভাগের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের সকল অনুচ্ছেদ যথা; ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৮ক, ৫৯, পঞ্চম ভাগের অনুচ্ছেদ যথা; ৬৫-৯২। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ৮ আগস্ট, ২০২৪ এ জনগনের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি (solemn expression of the will of the people) এবং জাতীয় ঐকমত্যের (National Consensus) ভিত্তিতে বর্তমান সরকার গঠিত হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ এ বর্ণিত বিধানের আলোকে জনগণের অভিপ্রায়ই (will of the people) এই সরকারের বৈধতার স্বীকৃত উৎস এবং আইনি ভিত্তি।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার বিগত ৫ আগস্ট জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। সরকার দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সুগম করতে ইতোমধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন ঘোষণা করে।
সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রস্তাবনাসমূহ সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের (Consensus) ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যেসব প্রস্তাবনা ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক গৃহীত হবে সেসব প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করেই জুলাই সনদ (ঔঁষু ঈযধৎঃবৎ) প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। জুলাই সনদ কার্যকরের বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নেই।
জনগনের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে গঠিত সরকার প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকারের পঠিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ (ঞযব চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব, ১৯৭১) মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক জীবন্ত দলিল, যা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। গুরুত্বের বিবেচনায় জুলাই সনদ একই মর্যাদার অধিকারী। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আরেকটি কার্যকরী পদ্ধতি হতে পারে গণভোট (জবভবৎবহফঁস)। জুলাই সনদের কোন বিধানের সাথে বিদ্যমান সংবিধানের কোন অংশ সাংঘর্ষিক হলে জুলাই সনদ প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার সরাসরি প্রতিফলনই জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র (Presidential Proclamation) বা গণভোট (Referendum) জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের স্বীকৃত ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি।
সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ের উপর আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র জনাব ফারুক হাসান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার, সাবেক জেলা জজ জনাব ইকতেদার আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. কোরবান আলী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাতীয় সংস্কার জোট লায়ন মো. আব্দুল কাদের হেলালী, কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ










